বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
সম্প্রতি সারা দেশে ছেলেধরা গুজব আতংক চলছে। ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ৪ টি অনভিপ্রেত ঘটনাকে ছেলেধরা বলে চালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে তিনটি মামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে ময়মনসিংহে গুজব ষড়যন্ত্রে চক্র কাজ করছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এদের প্রতিহত করা সম্ভব।
বুধবার ২৪ জুলাই সকালে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরে এ সংক্রান্তে কথা বলেন জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার হুমায়ন কবির।
প্রেস নোট সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার উজানঘাগড়া এলাকায় জৈনিক জসিম এর ঘরে রাকিব নামের এক সিধেল চোর ছুরি নিয়ে প্রবেশ করে। ঘরের লোকজনের চিৎকারে এলাকাবাসী এসে সিধেল চোরকে ছেলেধরা বলে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে চোরকে আটক করে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে চোরের নামে মামলা দেয় পুলিশ।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ভালুকা উপজেলার আমতলী গ্রামে। ওই গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে মঞ্জুরুল ও শেখ ফরিদ। মঞ্জুরুল তার বোনের সাথে বাড়ির পাশে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলার সময় দুই যুবক তাদের পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় দেয়ার পরেও সুজন ও হৃদয় নামের সেই দুই যুবক বিষয়টিকে গুজব আতংকের রূপ দিয়ে মারপিট করে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। পরে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করে।
তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে ভালুকা উপজেলার ধামশুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। একটি কোম্পানিতে চাকরিজীবী মহিলা মালেকা খাতুন(৩৫)। ঘটনার দিন তার শরীরে জ্বর অনুভব হওয়ার অফিস থেকে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। পথে শরীর বেশি ক্লান্ত লাগায় স্কুলের সামনে বসে পরে। সেখানে উপস্থিত লোকজন তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সে নিজ জন্মস্থান ভোলার ভাষায় কথা বলে। তার কথা সন্দেহ করে ঈদগাহের মিম্বারের সাথে বেধে মারধর করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরন করলে তার সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়। এবং পুলিশ জানতে পারে মহিলার আচরনে পাগলামি ভাব আছে।
চতুর্থ ঘটনাটিও ঘটে ভালুকা উপজেলায়।জীবনতলা গ্রামে সাবিনা নামের এক মহিলা তার ছেলেকে নিয়ে বাড়ির পাশে দাড়িয়ে হঠাৎ গলাকাটা বলে চিৎকার দেয়। পরে জানা যায় ওই মহিলার হৃদরোগ মানসিক সমস্যাও রয়েছে।
উল্লেখ্য প্রতিটি ঘটনায় প্রতিটি স্থানের লোকজন সাময়িক আতংকিত হয়ে পরে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌছে প্রকৃত ঘটনা সামনে আনে। উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে একটি বিষয় পরিস্কার যেকোন ঘটনাকে না যেনে উস্কানিকারীদের কথায় কোন পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থি। তাই সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব এ ধরনের ঘটনা দেখামাত্র পুলিশকে জানানে। এতে বেচে যেতে পারে কারও জীবন। প্রতিহত হবে গুজব সন্ত্রাসীরা।
জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিংএ উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এ নেওয়াজি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর মুর্শেদা বেগম, ফুলপুর সার্কেল এএসপি দীপক, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দ, ডিআইও ওয়ান মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।